পানির পাত্রে নিঃশ্বাস নেওয়া মানা
আমরা অনেকে পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তা ছাড়া তা সুন্নত পরিপন্থী কাজ। মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
আবু কাতাদাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যেন পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করে।
বিজ্ঞাপন
বাথরুমে প্রবেশ করলে যেন ডান হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে। এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ঢিলা-কুলুখও না করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৫৩)
এই হাদিসে নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতকে জীবনঘনিষ্ট কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মধ্যে একটি হলো, পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ না কর। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ ও তাতে ফুঁ দেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪২৮)
প্রিয় নবীজি (সা.)-এর এই সুন্নত পালন করলে যেমন সুন্নত পালনের সওয়াব পাওয়া যাবে, তেমনি অনেক ক্ষতি থেকে হেফাজতে থাকা যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নাক ও মুখ দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। নিঃশ্বাসে থাকে দেহের দূষিত বাষ্প ও রোগ-জীবাণুবাহী অপেক্ষাকৃত ভারী বায়বীয় পদার্থ কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা খাবার কিংবা পানির সঙ্গে মিশে আবার মানুষের দেহের ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর আস্তানা গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষ কত কিছুই না করছে। উন্নত বিশ্বে এই খাতে খরচ করা হচ্ছে কোটি কোটি ডলার। ডয়চে ভেলের তথ্য মতে, জার্মানিতে চারজনের একটি পরিবার বিশুদ্ধ পানির জন্য দেড় হাজার ইউরো ব্যয় করে। যা বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে এক লাখ ৪১ হাজার ৩৯৯ টাকা হয়। এত কিছু করার পরও যদি কেউ পানি পান করার সময় রাসুল (সা.)-এর এই হাদিসটির ওপর আমল না করে, তাহলে তার পুরো পরিশ্রমটাই বৃথা হয়ে যায়। প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেকের এভাবে পানি পান করতে গেলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে। কিংবা অতৃপ্তি থেকে যেতে পারে, তারা কী করবে? তার সমাধানও দিয়েছেন প্রিয়নবী (সা.)।
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানীয় পানকালে তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। একটি লোক নিবেদন করল, ‘পানপাত্রে (যদি) আমি খড়কুটো দেখতে পাই?’ তিনি বলেন, ‘তাহলে তা ঢেলে ফেলে দাও। ’ সে নিবেদন করল, ‘এক শ্বাসে পানি পান করে আমার তৃপ্তি হয় না। ’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি পেয়ালা মুখ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করো। ’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ৭৬৯)
শুধু পানি কেন, যেকোনো গরম খাবারও ফুঁ দিয়ে খাওয়া উচিত নয়। তাতে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুক। আমিন