পুতিনের পরমাণু হুমকি কি বাস্তবসম্মত
নিজেদের সুরক্ষায় সর্বশক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত সপ্তাহে এমন হুমকির পর নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো (উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট)। কারণ পুতিনের এ হুমকিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ইউক্রেনে পরমাণু হামলা হলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং ওয়াশিংটন চুপ থাকবে না।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু হামলার জন্য কতটা প্রস্তুত।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানে সাংবাদিক জুলিয়ান বর্গারের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেছেন, পুতিন ইউক্রেনে পরমাণু হামলার আদেশ দিলেও তা পালিত হবে কিনা, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণও তিনি জানিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞের বয়ানে। সামরিক বিশেষজ্ঞ পাভেল বায়েভ মনে করেন, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রগুলো সত্যিই কাজ করে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ সোভিয়েত আমলের এ অস্ত্রগুলোর অধিকাংশেরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পুরোনো ওয়্যারহেড যদি অত্যাধুনিক ৯কে৭২০ ইস্কান্দার বা কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে লাগানো হয়, তা ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আত্মরক্ষায় আগেই ‘পরমাণু হামলা’ চালাবে উ. কোরিয়া
অবশ্য জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক পাভেল পোদভিগের মতে, পারমাণবিক থেকে শুরু করে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ সামরিক প্রটোকল থাকে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার উপযোগী আছে কিনা, তা নিয়মিতই পরীক্ষা করে দেখা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করতে অন্তত তিন দিন সময় নেওয়া হয়; পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। এ ক্ষেত্রে পুরো হিসাবই আলাদা।’
পুতিন যে ইতিমধ্যে গোপনে সে প্রস্তুতি নিয়ে রাখেননি তা বলা মুশকিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মত, পুতিনের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক এক ব্যক্তিকে ব্রিফকেস হাতে দেখা যায়। এ ব্রিফকেসেই আছে পরমাণু হামলা চালানোর কোড ও চাবি। ব্রিফকেসটিকে যুক্তরাষ্ট্রে বলে ‘ফুটবল’ আর রাশিয়ায় ‘সেগেত’। মস্কোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং চিফ অব স্টাফের কাছেও এমন সেগেত থাকে। অবশ্য তাদের ছাড়াই পুতিন তার সেগেত থেকে হামলা চালাতে পারবেন।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের (এফএএস) মতে, রাশিয়ার কাছে এখন দুই হাজারের বেশি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এগুলো ভূমি, সাগর এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এগুলো রাশিয়ার ১২টি সাইটে রাখা আছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী বেলগোরোদ শহরে এমন একটি সাইট রয়েছে।
পুতিনের সেগেত থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইবিএম) নিক্ষেপের অর্ডার দেওয়া যায়। রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালাতে গেলে আইবিএম ব্যবহার করতে পারবে না দূরত্বের কারণে। সেক্ষেত্রে তাদের মাঝারিপাল্লার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র লাগবে, যার নিয়ন্ত্রণ পুতিনের সেগেতে নেই, আছে চিফ অব স্টাফের কাছে।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের (এফএএস) মতে, রাশিয়ার কাছে এখন দুই হাজারের বেশি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এগুলো ভূমি, সাগর এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এগুলো রাশিয়ার ১২টি সাইটে রাখা আছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী বেলগোরোদ শহরে এমন একটি সাইট রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিনের নিউক্লিয়ার টার্গেট : কী, কেন, কী হবে?
ইউক্রেনে পরমাণু হামলার আলাপ শুরু হতেই পুতিন তার ইনার সার্কেলে বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ বিষয়ে বায়েভ বলেন, ‘যে কোনো কমান্ডার-ইন-চিফের জন্য পরমাণু হামলার আদেশ দেওয়া কঠিন। কারণ আদেশ দেওয়ার পর যদি তা পালিত না হয়, সেক্ষেত্রে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।’
এমন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১৬ সালে ওবামা প্রশাসন বাল্টিক দেশগুলোকে নিয়ে সামরিক যোগাযোগ কৌশল সংক্রান্ত একটি মহড়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে ওবামা চেয়েছিলেন, যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের বাস্তবতা এলে, তা কীভাবে প্রস্তুত ও নিক্ষেপযোগ্য অবস্থায় আনা যায় তা দেখতে। কিন্তু নিজের জেনারেলদের বিরোধিতায় তিনি তা করতে পারেননি। জেনারেলদের বক্তব্য ছিল, প্রচলিত যুদ্ধেই যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জিততে পারে, সেখানে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের দরকার নেই। তাদের সঙ্গে সুর মেলান বাল্টিক নেতারাও। ফলে ওবামাকে পিছু হটতে হয়। ওবামার তৎকালীন জ্বালানিমন্ত্রী আর্নেস্ট মইনজ জানান, ওবামার সিদ্ধান্ত অনুসারে তখন বাল্টিক অঞ্চলে পরমাণু অস্ত্রের মহড়া হলে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে লড়াই শুরু হতো। এ ঝুঁকি কোনো পক্ষই নিতে চায়নি।