ইসলাম

আল্লাহর ভয়ে মহীয়সী নারীদের কান্না

 আল্লাহর ভয়ে কাঁদা মুসলিম নারী-পুরুষের প্রিয় আমল ও অনন্যবৈশিষ্ট্য। কারণ মুমিনের চোখের পানি আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তাই তো প্রকৃত মুমিনরা সর্বদা আল্লাহর ভয়ে কাঁদার চেষ্টা করে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দুটি ফোঁটা (চোখের পানি) ও দুটি চিহ্নের চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহ তাআলার কাছে আর কিছু নেই।

(তিরমিজি, হাদিস : ১৬৬৯) অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনকে কান্নার বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা কান্নাকাটি করো, যদি কাঁদতে না পারো তবে কান্নার ভান করো বা কাঁদার চেষ্টা করো। ’ (নাসায়ি, হাদিস ৪১৯৬)

আল্লাহর ভয়ে মুমিনের কান্না এতই প্রিয় আমল যে এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের এক শ্রেণি, যারা নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৮০৬)

নিম্নে কয়েকজন অনুসরণীয় মুসলিম মহীয়সী নারীর আল্লাহর ভয়ে কাঁদার বিবরণ তুলে ধরা হলো।

আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর কান্না

একবার জাহান্নামের কথা স্মরণ করে আয়েশা (রা.) কাঁদতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কে তোমাকে কাঁদাল? আয়েশা (রা.) বলেন, আমি জাহান্নামের ভয়ে কাঁদছি। আপনি কি কিয়ামতের দিন আপনার পরিবারের কথা স্মরণ রাখবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখতে পারবে না। এক. মিজানের (আমল পরিমাপক যন্ত্র) নিকট যতক্ষণ না জানতে পারবে যে তার আমলের পাল্লা ভারী হয়েছে না হালকা। দুই. আমলনামা পেশ করার সময়, যখন বলা হবে এসো আমলনামা পাঠ করো, যতক্ষণ না জানতে পারবে যে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হচ্ছে না পিঠের পেছন থেকে বাম হাতে। তিন. পুলসিরাতের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় যখন তা জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা হবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭২২)

অথচ আয়েশা (রা.)-এর মতো নবীপত্নী রাত-দিন ইবাদতে মশগুল থাকা সত্ত্বেও আখিরাতের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে যাননি; বরং রীতিমতো কাঁদতেন। এমনকি তাঁর জীবন এতই পূতপবিত্র ছিল যে স্বয়ং আল্লাহ তাঁর কাছে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাঁর ব্যাপারে কোরআনের দশটি আয়াত নাজিল হয়েছে। তাই জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে অশ্রুসজল হওয়া স্বতন্ত্র একটি আমল এবং আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় আমল। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়ে, তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী থাকে। (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৬০-৬১)

এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই আমলগুলো করে লোকেরা ভীত কম্পিত হবে কেন? তারা কি মদ পান করে কিংবা চুরি করে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে সিদ্দিক তনয়া, এরূপ নয়; বরং এরা তারা, যারা রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং দান-সদকা করে। এতদসত্ত্বেও তারা শঙ্কিত থাকে যে সম্ভবত (কোনো ত্রুটির কারণে) এ আমল কবুল হয়নি। এ ধরনের লোকই সৎকাজ দ্রুত সম্পাদন করে এবং তাতে অগ্রগামী থাকে। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৩৯৭)

এক মুমিন নারীর নীরব কান্না

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, এক দুবার বা পাঁচ-সাতবার নয়; বরং এর চেয়েও বেশিবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বনি ইসরাঈলে কিফল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিল। সে কোনোরূপ গুনাহের কাজ ছাড়ত না। একবার এক মহিলা অভাবে পড়ে তার কাছে এলো, সে ব্যভিচারের শর্তে তাকে ষাট দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিতে সম্মত হলো। নিরুপায় হয়ে মহিলাটিও রাজি হলো। কিফল যখন (নির্জনে) ওই মহিলার সঙ্গে তার শর্ত পূরণে উদ্যত হলো, তখন মহিলাটি আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে কেঁদে ফেলল। লোকটি বলল, কাঁদছ কেন? তোমাকে কি আমি জবরদস্তি করছি? মহিলা বলল, না, তবে এ গুনাহের কাজ আমি কখনো করিনি। আজ শুধু অভাবের তাড়নায় এতে বাধ্য হয়েছি। লোকটি বলল, অভাবের তাড়নায় পড়ে এসেছ, অথচ কখনো তা করোনি? যাও, তোমাকে ছেড়ে দিলাম। দিনারগুলোও তোমারই। সে আরো বলল, আল্লাহর কসম, ভবিষ্যতে আমিও কখনো আল্লাহর অবাধ্যতা করব না। সে রাতেই কিফল মারা গেল। সকালে দেখা গেল তার ঘরের দরজায় লেখা, ‘আল্লাহ তাআলা কিফলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৬)

সুবহানাল্লাহ! মুমিন নারীর কী অপূর্ব আল্লাহভীতি! বস্তুত আল্লাহভীতিতে যাদের হৃদয় পরিপূর্ণ থাকে এবং গুনাহ পরিহার করার ব্যাপারে যাদের বিবেক সদা জাগ্রত থাকে, তাদের অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। তাই তো আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তাকওয়া হলো অন্তরের বিষয়। অন্তরে আল্লাহভীতি থাকলে কর্মেও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.)-এর স্ত্রীর কান্না

কায়েস বিন আবু হাজেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.) স্বীয় স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে হঠাৎ কাঁদতে লাগলেন। তার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও কাঁদতে লাগলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন কাঁদছ? স্ত্রী বললেন, তোমাকে কাঁদতে দেখে আমারও কান্না চলে এসেছে। স্বামী বললেন, আমার কান্নার কারণ হলো, আল্লাহর এ বাণীটি আমার স্মরণ হয়েছে—‘তোমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই, যে জাহান্নামের ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে না (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৭১) আর আমার জানা নেই যে জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় আমি জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাব কি না (তাই আমি কাঁদছিলাম)। ’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৮৭৮৬)

Al Amin Hussain

Hello friend, I am (Al Amin Hussain) I am the owner of [Silent Force Team], Unauthorized use of content on this site is illegal, Do not upload site content without my permission. Thanks everyone

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button