রাজনীতি

ঠুনকো অজুহাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের পরিবহন ধর্মঘট

 বরিশাল-ভোলা রুটে লঞ্চ বন্ধের ঘোষণা আসে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে। বিকেলে আগামী দুই দিনের জন্য ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়। এর আগে আজ ও আগামীকাল পর্যন্ত বাস বন্ধের ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কেন্দ্র করে একের পর এক যানবাহন বন্ধের এসব সিদ্ধান্ত আসে।

গণপরিবহন বন্ধের কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঠুনকো অজুহাতে আকস্মিক সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। লক্ষ্য সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকানো। বিএনপির আগের গণসমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করেও একই কায়দায় যানবাহন বন্ধ করা হয়েছিল। নানা কারণ দেখিয়ে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হলেও মূলত বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষে দ্রুত যানবাহন চলে।

গণপরিবহনের রুট পারমিটের শর্তানুযায়ী, চাইলেই বাস বন্ধ রাখতে পারেন না মালিকরা। শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকরা ধর্মঘট করতে পারবেন ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে।

রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিআরটিএ) পরিচলক সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন বা ১৯৮৪ সালের মোটরযান বিধিমালায় এ বিষয়ে কিছু বলা নেই। তবে যাত্রীদের জিম্মি করা যাবে না।’

এদিকে শ্রম আইন বলছে, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া পরিবহন ধর্মঘট বেআইনি। এ বিষয়ে আইনজীবী ইসমাইল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী পূর্ব ঘোষণা ছাড়া পরিবহন ধর্মঘট আইনসিদ্ধ নয়। তা ছাড়া ধর্মঘটের কারণ হতে হবে যৌক্তিক।’

ধর্মঘট ডাকা প্রসঙ্গে গত ২৩ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধর্মঘট তো বেসরকারি মালিকরা ডাকে। বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বিআরটিসি বাস বন্ধ থাকে না। যদি বিআরটিসি বন্ধ থাকে তবে আমি জবাবদিহি করতে বলতে পারি।’

ভাড়ায় চলাচল করা মাইক্রো-প্রাইভেটকার বন্ধ প্রসঙ্গে বরিশাল ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জলিল জানান, আগামী দুই দিন (৪ ও ৫ নভেম্বর) শহরে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় মাইক্রো চালকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। তাই আপাতত গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই বরিশাল-ভোলা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ভোলায় আওলাদ নামক একটি লঞ্চে বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে সকাল থেকে শুধু ভোলা রুটে লঞ্চ চলছে না।

এর আগে মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবিতে বরিশাল থেকে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বরিশাল বাস মালিক গ্রুপ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, ৪ ও ৫ নভেম্বর তাদের ডাকা এ কর্মসূচির সঙ্গে বিভাগের বাকি পাঁচ জেলাসহ ফরিদপুর ও মাদারীপুর বাস মালিক সমিতিও একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দখলে দেশের সড়ক ও নৌ পরিবহন খাত। ব্যক্তি স্বার্থে এই দুই খাতের নেতারা মাঝে মাধ্যে বেঁকে বসলেও রাজনৈতিক ইস্যুতে আপসহীন। বাস মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

এদিকে সড়ক পথের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী সদস্য ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম বরিশাল ও মুন্সীগঞ্জ থেকে দুবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন চেয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান রিন্টুও বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।

পরিবহন ধর্মঘট প্রসঙ্গে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ কালবেলাকে বলেন, একেক এলাকার সমস্যা একেক রকম। তাই স্থানীয় মালিক ও শ্রমিক নেতারা বসে ধর্মঘটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক হাত নেই। একই দাবি শ্রমিক নেতা ওসমান আলীরও।

বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেন হবে? এখন যা পরিস্থিতি তাতে তো যে কোনো সময়ই লঞ্চ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

ঠুনকো অজুহাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের পরিবহন ধর্মঘট

বেআইনি ধর্মঘট ডাকলে জেল-জরিমানা

জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উল কবির বলেন, ‘সোমবার রাতে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস ৪ ও ৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চালাতে নিষেধ করেছেন। ঢাকা থেকে বরিশালগামী কোনো লঞ্চ ছাড়া যাবে না বলেও জানিয়ে গেছেন তিনি।’ বিষয়টি অস্বীকার করে পরিমল বলেন, আমি একজন সামান্য ঘাট শ্রমিক। আমার কথায় কি লঞ্চ বন্ধ হবে?’

জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, লঞ্চ চলবে নাকি চলবে না সেটি মালিক সমিতির ব্যাপার।

গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায় ও ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন থেকেই অঘোষিত ও ঘোষিত ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। যেসব দাবিতে ধর্মঘট হয়েছিল, সেগুলো পূরণ বা প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস না পেলেও সমাবেশ শেষ না হতেই যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কেন্দ্র করে একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সবাই বোঝে এগুলো পাতানো ধর্মঘট। বিরোধীদের কর্মসূচি ঠিকই হয়। তবে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।’

নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, রাজনৈতিক ইস্যুতে জনদুর্ভোগ কখনই কাম্য হতে পারে না।

Al Amin Hussain

Hello friend, I am (Al Amin Hussain) I am the owner of [Silent Force Team], Unauthorized use of content on this site is illegal, Do not upload site content without my permission. Thanks everyone

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button