পাঁচ মাসেও কমিটি হয়নি, বাড়ছে বিভক্তি-বিভেদ
যুবলীগ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখার সম্মেলনের প্রায় পাঁচ মাস হতে চললেও কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিভক্তি। একই সঙ্গে কমিটি ঘোষণা বিলম্বিত হওয়ায় অনেকে হতাশায় ভুগছেন। কিন্তু কী কারণে কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না, তা নিয়ে সবাই রয়েছেন অন্ধকারে।
নতুন কমিটি গঠনের জন্য চূড়ান্ত যাচাই—বাছাই চলছে জানিয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ কালবেলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের যুবলীগের নেতৃত্ব ঠিক করতে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তারা ত্যাগী, নির্যাতিত, রাজপথে পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের কাজ করছেন। সবার সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমে সহসা কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও আশা করছি।’
জানা যায়, গত ৩০ মে বন্দরনগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ মে হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উত্তর জেলা শাখার সম্মেলন হয়। এর আগের দিন পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলার সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১৩ সালে। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১০ সালে। আর উত্তর জেলার সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১২ সালে। দীর্ঘদিন ধরে একটি কমিটির দায়িত্ব পালন করায় যুবলীগে পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে। মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী ২২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৫ জন। দক্ষিণে সভাপতি পদে ৮, সাধারণ সম্পাদক পদে ২৭, উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে ৯ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন। তবে যুবলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হত্যা, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং নেতৃত্ব দানকারী কয়েকজন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সম্মেলনের সময়ই কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতাদের। কিন্তু দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য প্রার্থীর সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি থাকা এবং প্রার্থীদের বেশির ভাগই নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী থাকায় কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আনার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবলীগ নেতা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটা করে সম্মেলন হয়ে গেল প্রায় পাঁচ মাস হতে চলল, কিন্তু কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ। বর্তমানে পদপ্রত্যাশী নেতারা পৃথক কর্মসূচি পালন করায় কর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে।’
মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় যুবলীগ সম্মেলনের আগেই পদপ্রত্যাশী নেতাদের কাছ থেকে বায়োডাটা নিয়েছিল। সেখানে সভাপতি—সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিল বেশি। আমি যতটুক জানি পদপ্রত্যাশী নেতাদের থেকে তারা একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ সুবিধাজনক সময়ে কমিটি ঘোষণা করবে। যুবলীগের সুর্বণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের পরে চট্টগ্রামের যুবলীগের কমিটি দিতে পারে বলে আশা করা যায়।’
যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের বেশির ভাগই মূলত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া কয়েকজন যুবলীগের পদপ্রত্যাশী আছেন চট্টগ্রাম মহানগরে। দক্ষিণ জেলায় আওয়ামী লীগের দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল আলম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার অনুসারীরা প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া উত্তর জেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের বিদায়ী প্রশাসক এম এ সালামের অনুসারীরা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনুসারীরা গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগ নেতারা গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
নগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী এম আর আজিম কালবেলাকে বলেন, ‘কমিটি কখন ঘোষণা করবে সে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নেবেন। তবে সর্বোচ্চ যাচাই—বাছাইয়ের মাধ্যমে এটা করা উচিত, যেন কোনো হাইব্রিড নেতা কমিটিতে না আসে।’
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী নাসির উদ্দিন মিন্টু বলেন, ‘যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ একটি ভালো কমিটি দেওয়ার জন্য সময় নিচ্ছেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান ভালো মানুষ দিয়ে, ভালো কমিটি করার জন্য যারা পদপ্রত্যাশী তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সেই জন্য কিছুটা সময় লাগছে।’
উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। দ্রুত কমিটি দিলে উত্তর জেলা যুবলীগে একটি গতিশীলতা আসবে বলে মনে করি।