প্রতিশোধের হামলা রাশিয়ার
মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহর। কয়েক মাস শান্ত থাকার পর এসব হামলায় কিয়েভে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হওয়ার খবর ইউক্রেনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬০ জনের বেশি। গত শনিবার বিস্ফোরণে রাশিয়া-ক্রিমিয়া সংযোগ সেতুর একাংশ বিধ্বস্ত হয়। এ বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন বলছেন, ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে’র জেরে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। প্রতিশোধমূলক আরও হামলা চালানোর হুমকি দেন তিনি। এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের পাশে থাকার কথা বলেছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলো। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের।
ইউক্রেনের পুলিশ মুখপাত্র মারিয়ানা রিভা বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে সতর্কীকরণ সংকেত উপেক্ষা না করার জন্য কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য কিয়েভের বাসিন্দাদের আহ্বান জানান। বিবিসি জানায়, বেশ কয়েক মাস পর কিয়েভে এ ধরনের বৃহৎ পরিসরে হামলা হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী শহরটির কেন্দ্রস্থলে আঘাত হেনেছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া সব মিলিয়ে ৮৩টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর অধিকাংশ ভূপাতিত করা হলেও কয়েকটি আঘাত হেনেছে। গত শনিবার বিস্ফোরণে রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার সংযোগ সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ে। এ ঘটনার জন্য ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেন পুতিন। এর জেরেই ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করে দেশটি। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, (রাশিয়ায়) আবারও ‘সন্ত্রাসী হামলা’ চালানো হলে একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
কিয়েভ থেকে বিবিসির ইয়েভহেভ পেত্রোভ জানান, গতকাল সোমবার ইউক্রেনের পার্ক ও সড়ককে লক্ষ্য করে হামলা চালায় রাশিয়া। তিনি বলেন, তবে তারা সামরিক বাহিনী বা বেসামরিক লোকজনের অবকাঠামোকে লক্ষ্যে পরিণত করেনি। হামলা হয়েছে নাইপার অঞ্চলের একটি সেতুতেও। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই সেতুর দুই পাশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। সেতুটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিয়েভে জার্মান কনস্যুলেটেও হামলা হয়েছে। তবে জার্মানি বলছে, সেখানে কয়েক মাস ধরেই কেউ অবস্থান করছিলেন না। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের অনেক অঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে সুমি, জিটোমির, টারনোপিল, ইভানো, জাপোরিঝিয়া ও খারকিভে। কিয়েভে বোমা-আশ্রয়কেন্দ্র ও মেট্রোরেলের নিচে অবস্থান করছে হাজার হাজার মানুষ। সবার মধ্যেই আতঙ্ক। ভিডিও ফুটেজে দেখো গেছে, বিস্ম্ফোরণের পর চারদিকে এলোপাতাড়ি ছুটছে লোকজন।
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিক ও অবকাঠামোকে লক্ষ্যে পরিণত করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেন, এ সকালটি (সোমবার) অত্যন্ত কঠিন। তাঁরা ‘সন্ত্রাসী’দের সঙ্গে লড়ছেন। ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র আর ইরানের তৈরি ড্রোন ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যে পরিণত করছে। তিনি বলেন, রাশিয়া তার দেশকে পৃথিবী থেকে ‘মুছে ফেলতে’ চায়। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়াকে আরও বেশি একঘরে করে দিতে এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইবে।
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপের প্রভাবশালী দেশগুলো। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য এটাকে ‘বর্বর হামলা’ বলে মন্তব্য করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও। বার্লিনে অনুষ্ঠিত জি-সেভেন সম্মেলন থেকে তিনি ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইতালি। রুশ হামলার নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোও। ভারত বলছে, সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
ইউক্রেনে চলমান হামলাকে ‘প্রথম পর্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি বলেন, নাৎসি পদ্ধতিতে চলা ইউক্রেনের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা রাশিয়ার জন্য সরাসরি এবং পরিস্কার হুমকি।