সংসারের উন্নতির জন্য গেলেন সৌদি, দেশে ফিরলেন লাশ হয়ে
সংসারের চাকা সচল রাখতে ১৫ বছর আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার হারুন অর রশিদ (৪৫)। তার কঠোর পরিশ্রমে সংসার ভালোই চলছিল। হঠাৎ গত ২৫ আগস্ট সৌদি থেকে তার ছেলেকে ফোন করে বলা হয়, ‘ইয়োর ফাদার ইজ লস্ট।’ পরে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় হারুনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত হয় তার পরিবার। কিন্তু লাশ দেশে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে পরিবার। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কফিনবন্দী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন হারুন।
হারুন অর রশিদের ছেলে পারভেজ রশিদ বলে, তার বয়স যখন এক বছর, তখন গাড়িচালক বাবা সৌদি আরবে যান। ১৫ বছর ধরে তিনি সেখানকার একটি কোম্পানির গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আয় রোজগারও ভালোই ছিল। এই নভেম্বরেই তার দেশে ফেরার কথা ছিল। প্রতিদিন অন্তত একবার তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হতো। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।
হঠাৎ ২৫ আগস্ট সৌদি থেকে তাকে ফোন করে বলা হয়, ‘ইয়োর ফাদার ইজ লস্ট।’ পারভেজ ছুটে যান নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কাছে। তিনি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, হারুন আগস্টের মাঝামাঝি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সৌদিতে মারা গেছেন। পুড়ে যাওয়া শরীরের কিছু অংশ সেখানকার মর্গে রাখা আছে। পরে দূতাবাসের আবেদনে সেখানকার কর্তৃপক্ষ লাশ ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়। সেই থেকে পরিবারের লোকজন দিন গুনছিলেন।
অবশেষে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ বিমানে ঢাকায় আসে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সন্ধ্যা ৬টায় কফিনবন্দী হারুনের লাশ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার মালিপাড়া মহল্লার নিজ বাড়িতে আসে।
কফিনবন্দী হয়ে হারুন বাড়িতে এলেও একনজর দেখতে পাননি তার স্বজনেরা। স্বজনেরা বলেন, আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়ায় তার শরীরের অধিকাংশ ছাই হয়ে গেছে। অবশিষ্ট দেহাবশেষ বিশেষ ব্যাগে করে আনা হয়েছে, যা দেখার মতো নয়। ছেলে পারভেজ রশিদ বিমানবন্দর থেকেই বাবার কফিন ধরে আছে।
নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী স্বামী হারুন অর রশিদকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান তার স্ত্রী পারভীন খাতুন। পারভিন আক্তার জানান, সংসারের উন্নতির জন্য তার স্বামী ১৫ বছর ধরে প্রবাসে ছিলেন। এবার একমাত্র ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি এই নভেম্বরে একবারে দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। ফিরে এলেন, কিন্তু লাশ হয়ে।
হারুনের ভাই আল আমিন জানান, তার ভাই দীর্ঘ দিন বিদেশে চাকরি করেছেন। কিন্তু মৃত্যুর পর তেমন কোনো আর্থিক সুবিধা পরিবারকে দেওয়া হয়নি। এমনকি বিমার টাকাও পরিবার পায়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দেখার অনুরোধ করেন তিনি।
The heart in what it be fun over to suppress