একসময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থাকলেও বর্তমানে এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।আজ সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে (২০২১ সালের আগে) বিআরটিসি একসময় অলাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। ঠিকমতো বেতন দিতে পারত না। ৬ মাসের বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। একটা ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠান ছিল এটি। সেই প্রতিষ্ঠান এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আজকে বিআরটিসি দেশের অন্যান্য সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।’তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা এবং পদোন্নতিসহ সুবিধাবঞ্চিতদের মানববন্ধন তথা দাবি-দাওয়ার কথা শোনা গেলেও বিআরটিসিতে এসব হয়নি। এটার মূল কারণ হচ্ছে- নিয়মিত বেতন-ভাতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সবার পদোন্নতি ও সঠিক সময়ে বেতন বৃদ্ধি করা। শুধু তাই নয়, দেশের এই অস্থির সময়েও বিআরটিসি ১২ কোটি টাকা বেতন ঠিক সময়ে প্রদান করেছে। রাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুর্নীতির কথা শোনা গেলেও বিআরটিসি নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন।’মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্বে নতুন গাড়িবহর থাকা সত্ত্বেও মাসে প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পুরাতন গাড়িবহর নিয়ে মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে।’এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিআরটিসির ৫৭টি গাড়ি ও একটি স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিআরটিসির বাস, ট্রাক ও স্থাপনা ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় মোট তিন কোটি ৮০ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এই বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক খুবই কম। এটাকে ক্ষতি বলার সুযোগ নেই। কারণ একটা ডিপো আক্রমণ হলেই ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারত। সেই বিবেচনায় এটা কোনো ক্ষতিই না। দেশের ৩২টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৪৫টি বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের সুবিধা দিচ্ছে। তাই আমাদের প্রতি ছাত্র-জনতার আলাদা একটা ভালোবাসা আছে। এই সময়ে বিআরটিসিও ছাত্র-জনতার পাশে ছিল। দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থায় ছাত্ররা যখন দায়িত্ব পালন করেছিল, তখন আমাদের প্রধান ভবনে আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম যেন তারা বিশ্রাম নিতে পারেন এবং তাদেরকে আপ্যায়নের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল।’তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিআরটিসি জনবলকে দক্ষ করার লক্ষ্যে চালক, কারিগরসহ প্রায় ১২৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি মেরামত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনকি গত তিন বছরে মেরামতকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মেরামত খাতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে।’সামনে বিআরটিসির কোনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে কোরিয়া থেকে ৪০টি গাড়ি আসার কথা রয়েছে। এখন দেশের এই পরিস্থিতির জন্য হয়তো সময় আরও লাগবে।’বিআরটিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘গাড়িবহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত করাসহ দেশের সব জেলায় বিআরটিসির বাস পরিচালনা করবে। এ ছাড়া চেসিস ক্রয় করে নিজস্ব কারখানায় গাড়ি তৈরি করতে চায় বিআরটিসি। ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টার ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সিস্টেম চালু করা এবং বিআরটিসির প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ কার্যক্রম আরও আধুনিয়াকনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।’
Related Articles
Check Also
Close
-
হাসপাতালে সাবেক বিচারপতি মানিক, অস্ত্রোপচার সম্পন্নAugust 24, 2024