ইসলাম

সব প্রাণের মূলে পানি

 আল্লাহ বলেন, ‘তারা (কাফির) কি ভেবে দেখে না যে আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠ মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করেছি, আমি প্রাণবান সব কিছুকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি, তবু কি তারা ঈমান আনবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)

তাফসির : আগের আয়াতগুলোতে যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে তাদের বিভিন্ন কাজ ও বিশ্বাসের কথা বলে এসবের নিন্দা করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহর নিদর্শনের কথা বলে কাফির-মুশরিকদের তার সৃষ্টিজগতের রহস্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে। আয়াতের প্রথম অংশের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মত রয়েছে। প্রসিদ্ধ মতটি হলো, আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠ উভয়টি একসঙ্গে ছিল।

অতঃপর মহান আল্লাহ আকাশ ও ভূপৃষ্ঠকে পৃথক করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, আকাশ ও ভূপৃষ্ঠ একসঙ্গে মিলিত ছিল। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হতো না এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে কোনো শষ্যদানা উৎপন্ন হতো না। এরপর আল্লাহ যখন ভূপৃষ্ঠের বাসিন্দাদের সৃষ্টি করেন তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয় এবং ভূপৃষ্ঠে ফসল উৎপন্ন শুরু হয়। আরেকটি মত হলো, আকাশ ও ভূপৃষ্ঠ একসঙ্গে মিলিত ছিল। এরপর আকাশকে ওপরে তুলে এবং ভূপৃষ্ঠকে স্বস্থানে রেখেছেন। এর মধ্য ভাগে বায়ু ও বাতাসকে রাখা হয়। কারো মতে, আকাশ ও ভূপৃষ্ঠ উভয়টি একসঙ্গে ছিল। এরপর উভটি পৃথক করে সাত স্তর করা হয়। সর্বোপরি মহান আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠকে বৃষ্টি বর্ষণ ও ফসল উৎপাদনের উপযুক্ত করেছেন। আয়াতের শেষ পর্যায়ে প্রশ্ন করা হয়, এসব জানার পরও কি তারা একমাত্র আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিজগতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে অবিশ্বাস করবে? (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩৩৯/৫; তাফসিরে সাদি, পৃষ্ঠা : ৫২২, তাফসির আল-ওয়াসিত)

যেকোনে জীবন্ত বস্তু তৈরির পেছনে পানির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর তাই শষ্য-ফসল উৎপাদনে বৃষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশ ও ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তোমাদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল উৎপন্ন করেন। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত ৩২)

মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের মাধ্যমে সাগর থেকে বৃষ্টিসঞ্চারী মেঘমালা আকাশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বৃষ্টিসঞ্চারী বায়ু পাঠাই। এরপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি আর তোমাদের পান করাই। মূলত তোমরা তা সংরক্ষণ করতে সক্ষম নও। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত ২২)

এমনকি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জন্মের পেছনে পানি তথা বীর্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব মানুষ যেন দেখে তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সবেগে স্খলিত পানি (বীর্য) থেকে। ’ (সুরা : তারিক, আয়াত : ৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে, অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন, তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৫৪)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যখন আপনাকে দেখি তখন আমার অন্তর প্রশান্ত এবং চক্ষু শীতল হয়। আপনি সব বস্তু সম্পর্কে কিছু জানান। তিনি বলেছেন, ‘সব বস্তু পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ’ অতঃপর আমি বললাম, আমাকে এমন কিছু বলুন, যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে প্রবেশ করব। তিনি বলেছেন, ‘সালামের প্রসার কোরো। অন্যকে আহার করাও। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো। রাতে যখন মানুষ ঘুমায় তখন নামাজ পড়ো। অতঃপর নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কোরো। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯৩২)

     গ্রন্থনা : মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ

Al Amin Hussain

Hello friend, I am (Al Amin Hussain) I am the owner of [Silent Force Team], Unauthorized use of content on this site is illegal, Do not upload site content without my permission. Thanks everyone

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button