অর্থনীতি

হাঁসের খামারে স্বপ্ন বুনছেন মানিকছড়ির পিংকি

 স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। স্বপ্ন যখন গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে তখনই ২০২১ সালের ১০ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মা চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। মায়ের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই একই বছরের ১০ নভেম্বর বাবাকেও হারান। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে তার সব স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। 

বাবা-মাকে হারিয়ে কলেজপুড়য়া ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে বিপাকে পড়েন পিংকি রানী নাথ। কলেজপড়ুয়া দুই বোন আর ভাইয়ের সংসারে শুরু হয় আর্থিক টানাপোড়েন। পাশে দাঁড়ান মামা নারায়ণ চন্দ্র নাথ।

তবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায়। স্বপ্ন পূরণে যোগ্যাছোলার হাঁসের খামারি এমরান হোসেনের গল্প শুনে বাবার রেখে যাওয়া এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে মানিকছড়ির বাটনাতলীর ছদুরখীল হিন্দুপাড়ায় গড়ে তোলেন স্বপ্নের খামারটি।

মানিকছড়ির প্রয়াত সাধন চন্দ্র নাথ ও লক্ষ্মী রানী নাথের বড় মেয়ে পিংকি রানী নাথ চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন।  

উদ্যোক্তা পিংকি বলেন, ‘মা-বাবাকে হারানোর পর নিজের স্বপ্ন ফিকে হয়ে এলেও হাল ছাড়িনি। তিন ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ ও নিজেদের ভরণপোষণের কথা ভেবে যোগ দিই যোগ্যাছোলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখান থেকে পাওয়া সম্মানী দিয়ে ভাই-বোনের খরচ চালানো মুশকিল হয়ে পড়ছিল। তাই চলতি বছরের জুনে কুমিল্লা থেকে ৪৫০টি হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে বাড়িতেই গড়ে তুলি খামার। এই খামার ঘিরেই আমার স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ ছাড়া খামার গড়ে তোলায় নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। শুরুতেই প্রায় একশ হাঁসের বাচ্চা মারা গেছে। তাই একজন সফল খামারি হতে অবশ্যই প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করতে পারলে হাঁস পালন একটি লাভজনক প্রকল্প হতে পারে।’

হাঁসের বাচ্চা কেনা, এগুলো খাবার ও ঘর সংস্কার করতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাঁসের চিকিৎসা, টিকা ও সঠিক পরামর্শ পেলে ব্যয় আরও কমে আসত। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে হাঁসগুলো ডিম দেওয়া শুরু করবে। সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে লাভবান হবো।’

পিংকি রানী নাথের হাঁস।

৩৩শ’ টাকায় হাঁসের খামার শুরু বাবুল দম্পতির, এখন আয় ৫ লাখ টাকা

এরই মধ্যে বিয়েও করেছেন পিংকি রানী নাথ। তবে ভাই-বোনদের স্বাবলম্বী করতে খামারের দেখভাল তিনিই করেন জানিয়ে বলেন, ‘পাশের উপজেলায় স্বামীর বাড়ি লোকজনের সহযোগিতায় খামারের কাজ করতে পারছি। তবে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছি। দেশের শিক্ষিত বেকাররা যারা অযথা সময় নষ্ট না করে স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই ধরনের খামার গড়ে তুলতে পারেন। এতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে।’

মানিকছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সূচয়ন চৌধুরী বলেন, ‘পিংকি রানীর সফলতা দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।’

Al Amin Hussain

Hello friend, I am (Al Amin Hussain) I am the owner of [Silent Force Team], Unauthorized use of content on this site is illegal, Do not upload site content without my permission. Thanks everyone

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button